ইতিবাচক সমালোচনা কিভাবে করবেন?



 আমরা হরহামেশাই মানুষের সমালোচনা করে থাকি। যার সমালোচনা করছি আমরা কখনো ভেবে দেখি না, সে কি মন খারাপ করছে কিনা, সে কি কষ্ট পাচ্ছে কিনা। জাতিগত ভাবেই বাঙালিরা একটু সমালোচনা প্রিয়, তাই সমালোচনা ছেড়ে দেওয়া আসলেই খুব কষ্টকর ব্যাপার। 

কিন্তু এমন যদি হয় , আপনি সমালোচনা করলেন ঠিকই কিন্তু লোকটি তাতে কষ্ট না পেয়ে আরো উৎসাহিত হলো? 


চলুন একটি গল্প শুনি -

আর গল্প শুরু করার আগে বলে দিচ্ছি আপনি যদি আমাদের চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে, অবশ্যই অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করবেন এবং যদি অলরেডি সাবস্ক্রাইব করে থাকেন তাহলে আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। 

তাহলে গল্প আসি। 

রহিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি ছিল, যে তার প্রতিবেশী জলিল সম্পর্কে সব সময় নিন্দা করত। সে একদিন তার ভুল বুজতে পেরে মসজিদের ইমামের কাছে গেল এবং সব খুলে বলল।  

ইমাম সাহেব তাকে বললেন, তুমি এক বস্তা তুলা নিয়ে গিয়ে রাস্তার মোড়ে গিয়ে ফেলে দিয়ে আসো। 

লোকটি ঠিক মতোই কাজটি করে এলো। 

তারপর ইমাম সাহেব তাকে আবার রাস্তার মোড়ে গিয়ে তুলাতুলি বস্তাবন্দি করে নিয়ে আসতে বললেন। লোকটি রাস্তার মোড়ে গেল ঠিকই, কিন্তু দেখল যে কোন তুলাই আর অবশিষ্ট নেই, সব তুলা উড়ে গেছে। 

রহিম মিয়া খালি হাতে ইমাম সাহেবের কাছে গেল। ইমাম সাহেব তাকে বললেন, "তোমার কথাগুলো ওই তুলার মতই, তুমি সহজেই যেমন নিন্দামন্দ করো, কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছ, কথা একবার বললে তা কিন্তু আর ফিরিয়ে নেয়া যায় না।"
 

তাই কারো সম্বন্ধে সমালোচনার আগে অবশ্যই ১০ বার ভাবা উচিত।



তাই এই মুহূর্ত থেকে আমরা শিখব, কিভাবে আমরা গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারি। 

মূলত, কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য নয় বরং তাকে সাহায্য করার জন্য যৌক্তিক এবং ইতিবাচক সমালোচনা করাই মূলত গঠনমূলক সমালোচনা। কারণ সাহায্য করার আগ্রহ থেকেই সমালোচনা করার অধিকার জন্মায়। 

যেকোনো ব্যক্তির কাজকে সমালোচনা করুন কখনোই ব্যক্তি মানুষকে নয়। ব্যক্তি কেন্দ্রিক সমালোচনা আত্মসম্মানে আঘাত করে। এতে যা সমালোচনা করা হচ্ছে সে কিন্তু আদতে পরিবর্তন না হয় আরও বিগড়ে যেতে পারে। 

এখন আমরা বলতে চলেছি এমন কিছু টিপস যা আপনার সমালোচনাকে অনেক ইতিবাচক করে তুলবে। তাই পোস্টটি টেনেটুনে না পড়ে পুরোপুরিভাবে পড়ুন এবং ভালো লাগলে একটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার দিয়ে রাখুন। 

১. একজন কোচ যেমন সাহায্য করার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তার খেলোয়াড়দের ভুল ত্রুটি গুলো দেখিয়ে দেন ঠিক তেমনি ভাবে ভুল ত্রুটি গুলো তুলে ধরুন। 

২. যার সমালোচনা করছেন তাকে পুরোপুরি ভাবে বোঝার চেষ্টা করুন এবং তার পাশে দাঁড়ান। তবে সে অবশ্যই অনুপ্রাণিত হবে।

৩. সংশোধনের উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচনা করুন, শাস্তির উদ্দেশ্যে নয়। 

৪. সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে সমালোচনা করুন। "আপনি সব সময় ভুল করেন বা আপনি প্রায়ই ভুল করেন " এই কথাগুলো মানুষের ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি করে। 

৫. সব সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখুন, এবং নিজের বক্তব্যে অনড় থাকুন। 

৬. বোঝাবার জন্য সমালোচনা করুন, সমালোচনা কখনোই ভয় দেখানোর জন্য করা উচিত নয়। 

৭. সুনির্দিষ্টভাবে সমালোচনা করুন, এতে করে দ্বিতীয়বার আর বলার প্রয়োজন হয়না।

৮. সকলের সামনে সমালোচনা করা উচিত নয়, এতে করে আপনার সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। কারণ সকলের সামনে সমালোচনা অপমানজনক। 

৯. যার সমালোচনা করছেন তাকে বলার সুযোগ দিন।

১০. ভুল সংশোধন করে নিলে তার কি কি উপকার হবে তা তাকে বুঝিয়ে দিন।

১১. সমালোচনার সময় ব্যক্তিগত ক্ষোভ কখনোই প্রকাশ করবেন না।

১২. ভুল কাজের জন্য যে যে ক্ষতিগুলো হয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন এবং সংশোধন না করলে আরো কি কি ক্ষতি হতে পারে তা তাকে বলুন।

১৩. সমালোচনা ঠিক ওষুধের মত অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে যেরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় , ঠিক তেমনি কম দিলে কাজে লাগে না। কিন্তু সঠিক মাত্রায় দিলে আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়।

১৪. যাকে সমালোচনা করছেন সে যদি তার ভুল বুঝতে পারে, তাহলে তাকে ধন্যবাদ জানান। 

১৫. এবং ভালো কাজের প্রশংসা করে একটি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বক্তব্য শেষ করুন। 

তো বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে কিভাবে সমালোচনা করলে একটি ব্যক্তি তার ভুল শুধরে নিতে পারবে এবং এবং জীবনে উন্নতি করতে পারবে। 

আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি থেকে বিন্দুমাত্র নতুন কিছু শিখে থাকেন, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এবং পরবর্তী পোস্টটি আসার আগ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবেন। 


ধন্যবাদ সবাইকে। 

Post a Comment

0 Comments