![]() |
ঘূর্ণিঝড়/Cyclone |
বাংলাদেশের ইতিহাসে
সবচেয়ে ভয়ংকর ঝড় যেটা
১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে এক প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়। এই প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়
ও জলোচ্ছাসের কারনে দেশের উপকুলীয় অঞ্চল পরিনত হয় মৃত্যুপুরীতে। মূলত বাংলাদেশের ভোলায়
আঘাত হানার কারনে এটি ভোলা সাইক্লোণ নামে পরিচিত।
একটি
জড়িপে দেখা যায় গত ২০০ বছরে ৬৪ বারই বড় ধরনের ঘূর্ণীঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার রিপোর্টে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের উপরে বয়ে
যাওয়া ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরে বয়ে যাওয়া ভোলা সাইক্লোনকে পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসের
সবচেয়ে ভয়ংকর প্রানঘাতী ঝড় হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
কি হয়েছিলো সেদিনঃ
প্রাথমিক
পূর্বাভাসে বলা হয়েছিলো মাঝারি মাত্রার ঘূর্ণীঝড়ের কথা। বিকেলের শেষ দিক থেকে
রেডিওতে আগাম বিপদ সম্পর্কে সতর্কবাণী প্রচার হতে থাকে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে
গেছে। ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড়টির কারণে সৃষ্টি হয় প্রায় ২০ ফুট
জলোচ্ছ্বাস। ভাসিয়ে নিয়ে যায় এর সামনে পরা সমস্ত কিছু।
প্রানহানীর সংখ্যাঃ
এই ঘূর্ণিঝড়ে সরকারী
হিসাবে প্রায় ৫ লক্ষাধিক লোক প্রাণ হারায়। বেসরকারী হিসাবে সেটা প্রায় ১০ লক্ষ।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমানঃ
দেশের মূল ভুখন্ডের
১০ ভাগের ১ ভাগ এলাকাই উপকূলীয় এলাকা। সেদিনের ঝড়ে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো দক্ষিণাঞ্চলের প্রায়
৪৮ লাখ লোক এবং পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় প্রায় ১০ লাখ একর জমির ফসল। হারিয়ে যায়
প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার গবাদিপশু ও আনুমানিক ৫ লাখ হাসমুরগী। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৮ লাখ
ঘরবাড়ি ও সাড়ে ৩ হাজার স্কুল। একেবারে বিকল হয়ে যায় ৯ হাজার সমুদ্রগামী ও ৯০ হাজার
নদীতে চলাচলকারী নৌযান। এসব নৌযানের ৬৫ শতাংশ আবার ছিলো মাছ ধরার।
দূর্যোগ পরবর্তী অবস্থাঃ
ভোলা
সাইক্লোনের ৪ মাস পর ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী-মার্চের দিকে এক জরিপে দেখা যায় ৬ লাখ
লোক তখনও আবাসন সমস্যায় ভুগছিলো। এবং ত্রাণের ওপর বেচেছিলো আরো প্রায় ১০ লাখ লোক।
এই
ঘূর্ণীঝড় শুধু ব্যাপক প্রাণহানীই ঘটায় নি, এটি দেশের আর্থসামাজিক এবং ততকালীন
রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিলো।
0 Comments