হার্ড ইমিউনিটি কি করোনা মোকাবেলার শেষ অস্ত্র ?

এটাই কি একমাত্র পথ

যখন একটি এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে কোন একটি সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক দেয়া হয় তখন ওই এলাকায় ওই রোগটির ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। কারণ ওই এলাকায় আর সংক্রমিত হওয়ার মতো মানুষই থাকে না।


করোনাভাইরাসের এখনো কোন প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তাহলে এটি মোকাবেলায় হার্ড ইমিউনিটি কিভাবে কাজ করবে?



এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে, যারা একবার ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।
এভাবে বেশি মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকলে এক সময় বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। যার কারণে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি হয় এবং ওই রোগটির সংক্রমণ থেমে যায়।

চলছে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ
করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি কাজ করাটা কঠিন।করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে ৯০ ভাগের বেশি সংখ্যক মানুষ এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ৯ জন আক্রান্ত হতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি হতে হলে যদি এখানে ১৭ কোটি মানুষ থাকে তাহলে প্রায় ১৬ কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি ২.৫ জন ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে।
১৬কোটি মানুষ আক্রান্ত হলে এদের মধ্যে যদি ০.০০১ ভাগ মানুষেরও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তাহলে যে বিশাল সংখ্যক মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হবে বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাস্তবতায় সেটা সরবরাহ করা অসম্ভব ।

করোনা ভাইরাস
বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে অমুক এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু আসলে তো লকডাউন করা হযনি। বরং বলা যায় সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই ছুটিতে দলে দলে মানুষ গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছে। আবার পোশাককর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাঁরা মরিয়া হয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। ফেরার পর শুনেছেন ছুটি বহাল আছে। আবার গ্রামে ফিরে যাও। ফের গার্মেন্টস খোলা হলো। এই যে কয়েকবার করে মানুষ রাজধানী ও গ্রামে আসা–যাওয়া করল, এতে তো ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়েছে।



ভ্যাকসিন
যেকোনো ধরনের মহামরি মোকাবিলায় সাপ্রেশন অথবা কনটেইনমেন্ট পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এই সাপ্রেশন সবাইকে রীতিমতো আবদ্ধ বা লকডাউন করে রোগকে মোকাবিলা করা হয়। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে চীন, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স বা ভিয়েতনাম সুফল পাচ্ছে। এসব দেশে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার কমে আসছে। অপর দিকে কনটেইনমেন্ট পদ্ধতিতে হার্ড ইমিউনিটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে টিকা প্রয়োগে অথবা রোগ ছড়াতে দিয়ে মানবদেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করা হয়।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি যখন শুরু হয়, তখন অনেক দেশেই হার্ড ইমিউনিটির ব্যাপারে কথাবার্তা হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত কোন দেশই সেই পথে না হেঁটে বরং লকডাউনের পথে গেছে।
কারণ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে প্রাকৃতিকভাবে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হবে, আর যত মানুষ মারা যাবে, তার সংখ্যা হবে বিরাট।

Post a Comment

0 Comments